প্রিয় শিক্ষার্থী, 'অঞ্জলি ২'-এ তোমরা খ্রীষ্ট ধর্মের বিধিবিধান, বিবাহ সংস্কার, পারিবারিক দায়িত্ব, মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের ও সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য সম্পর্কে জেনে সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে।
এ অঞ্জলি চলাকালীন তুমি একটি খ্রীষ্টিয়ান আত্মীয়ের বিবাহে যোগদানের অভিজ্ঞতা সহপাঠীকে জানাবে। তুমি এই কাজটি করার জন্য পারস্পরিক ও দলে আলোচনার সুযোগ পাবে। তোমরা তোমাদের পরিবারের/ আত্মীয়ের বিবাহের অ্যালবাম থেকে বিবাহের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি সংগ্রহ করে ফটোকোলাজ তৈরি করে বিবাহের রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে এবং জানাতে পারবে। পবিত্র বাইবেলের শিক্ষার আলোকে এবং বিবাহের ভিডিও দেখার মাধ্যমে বিবাহের খ্রীষ্টিয় রীতিনীতি জেনে আদর্শ খ্রীষ্টিয় পরিবারের ভালো দিকগুলো জেনে লিপিবদ্ধ করে দলে উপস্থাপন করবে। এই শিক্ষার আলোকে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী কয়েকটি পরিবার পরিদর্শন করে তাদের গঠনগত কাঠামো জেনে একটি প্রবাহচিত্র তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। ফ্যামিলি ট্রি অঙ্কন, সাক্ষাৎকার, পবিত্র বাইবেলের আলোকে পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব জেনে, বিতর্কের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব বিশ্লেষণ এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে। |
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাশের সহপাঠীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করো। তোমার সহপাঠী কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করো। 'যীশু তোমাকে ভালোবাসে' এই বলে উৎসাহ দাও। সুন্দর পরিবার প্রাপ্তির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে সেশনটি শুরু করো।
তোমরা বাড়িতে নিশ্চয়ই চিন্তা করে প্রস্তুতি নিয়েছ যে এ সেশনে বিবাহে যোগদানের কোনো অভিজ্ঞতার কথা সহপাঠীকে জানাবে। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে জোড়ায় বসো। তোমরা তোমাদের আত্মীয়ের বিবাহে যোগদানের অভিজ্ঞতা কীভাবে সহযোগিতা করবে তা ঠিক করো।
বিবাহ অনুষ্ঠানে তুমি কী কী হতে দেখেছিলে তার একটি আউটলাইন তৈরি করো যেন তোমার অভিজ্ঞতা ভালোভাবে বলতে পারো। তোমাদের জন্য আউটলাইনের একটি নমুনা এখানে দেওয়া হলো।
তোমরা একে অপরকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মীয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদান করে বিবাহের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছ তা বর্ণনা করো। তুমি যখন তোমার সহপাঠীর কাছ থেকে বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানের অভিজ্ঞতা শুনছো, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট নিতে ভুলো না কিন্তু।
বিবাহ অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা শেয়ারিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সহপাঠীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেশনটি সমাপ্ত করো।
বাড়ির কাজ
তোমরা প্রত্যেকে একটি খ্রীষ্টিয়ান বিবাহের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ছবি সংগ্রহ করে আনবে। এজন্য তোমাদের মাতা-পিতা, বড়ো ভাই, বোন অথবা নিকটাত্মীয়ের বিবাহের অ্যালবামের ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে এসো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, এ সেশনে তোমরা বিবাহের একটি ফটোকোলাজ তৈরির মধ্য দিয়ে বিবাহের রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। ফটোকোলাজ তৈরির জন্য তোমরা প্রয়োজনীয় ছবি, কাঁচি, পোস্টার পেপার ও আঠা সংগ্রহে রাখো।
শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে তোমরা সেশনটি শুরু করো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে চারজন করে দলে ভাগ হও। প্রত্যেক দলের জন্য একটি করে পোস্টার পেপার সংগ্রহে রাখো। এখন তোমরা দলগতভাবে ছবিগুলো দিয়ে বিবাহের একটি ফটোকোলাজ তৈরি করো। ফটোকোলাজটি বিবাহের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ক্রমানুসারে সাজিয়ে তৈরি করো। একটি সাধারণ খ্রীষ্টিয়ান বিবাহে যে পর্যায়গুলো থাকে, তা হলো বাগদত্তা, বানপ্রকাশ, গায়ে হলুদ, আংটি বদল, মালা বদল, বিবাহের উপাসনা, বিবাহনিবন্ধনে স্বাক্ষর, বিবাহ ভোজ, হানিমুন ও পরিবার। এজন্য বিবাহের এ পর্যায়গুলোর ছবি ফটোকোলাজে রেখে তোমরা একটি বিবাহের সামগ্রিক চিত্র প্রকাশ করতে পারো।
ফটোকোলাজের একটি নমুনা-চিত্র নিচে দেওয়া হলো। এটির অনুরূপ অথবা তোমাদের চিন্তা ব্যবহার করে নতুনভাবেও ফটোকোলাজটি তৈরি করতে পারো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা তোমাদের তৈরিকৃত ফটোকোলাজটি পরবর্তী সেশনে উপস্থাপন করবে। এজন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদনের সময় কী কী বিধিবিধান/ রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়েছিল, সেগুলো চিন্তা করে এসো। এ বিষয়ে প্রত্যেক দল আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসো, যেন সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারো।
শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সেশনটি শেষ করো। ধন্যবাদ-
প্রিয় শিক্ষার্থী, এ সেশনে তোমাদের রশি, আঠা ও ক্লিপ দরকার হতে পারে। তোমরা যেন ফটোকোলাজগুলো রশিতে ঝুলিয়ে/ক্লিপবোর্ডে টাঙিয়ে/আঠা দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে পারো, সেজন্য শিক্ষকের কাছ থেকে সেগুলো সংগ্রহে রাখো।
সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ছোটো একটি প্রার্থনার মাধ্যমে সেশনটি শুরু করো। ফটোকোলাজ তৈরি এবং ছবি দেখে বিবাহের রীতিনীতি জেনে কেমন লেগেছিল তা জানাও। সেশনের শুরুতে নিচের গানটি অথবা শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে সমতুল্য পরিচিত একটি গান করো।
আমরা এক প্রভুর প্রেমের বন্ধনে
আমরা এক প্রভুর প্রেমের বন্ধনে, আমরা এক প্রভুর প্রেমের বন্ধনে
এস প্রভুর আত্মাতে আত্মায় মিলি একসাথে।
আমরা এক প্রভুর প্রেমের বন্ধনে।
এসো সবে মিলে করি প্রভুর গান এসো বলি যে প্রেম দিয়েছেন তিনি
এসো সবে মিলাই হাত যাতে জগত জানতে পাক
আমরা এক প্রভুর প্রেমের বন্ধনে।
খ্রীষ্ট সঙ্গীত (নতুন প্রজন্ম-৩১)
https://youtub.be/izbqltL LuYUI?feature=shared
বিগত ক্লাসে তোমরা দলগতভাবে বিবাহের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ক্রমানুসারে সাজিয়ে যে ফটোকোলাজগুলো তৈরি করেছিলে সেগুলো আজ শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। শুরুতেই শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে ফটোকোলাজগুলো শ্রেণির নির্দিষ্ট স্থানে ঝুলিয়ে, ক্লিপ বোর্ডে আটকে অথবা দেওয়ালে লাগিয়ে রেখো যেন সকলে দেখতে পায়। প্রত্যেক দল থেকে তোমরা দুজন তোমাদের তৈরিকৃত ফটোকোলাজের বিষয়গুলো বর্ণনা করো। একজন ফটোকোলাজ দেখে বিবাহের আউটলাইন উপস্থাপন করো এবং অন্যজন ফটোকোলাজের ছবি দেখে কী কী বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছিল সেগুলো উপস্থাপন করো। তোমরা প্রত্যেকে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে সঠিক সময় তোমাদের উপস্থাপনা সমাপ্ত করবে।
বাড়ির কাজ
পরবর্তী সেশনে তোমরা একটি আদর্শ খ্রীষ্টিয় পরিবারের ভালো দিকগুলো মাতা-পিতা/অভিভাবকের কাছ থেকে জেনে নোটবুকে লিখে আনবে।
শিক্ষক ও সহপাঠীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সেশনটি সমাপ্ত করো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে সেশনটি শুরু করো।
শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলে ভাগ হও। প্রত্যেক দলের জন্য একজন দলনেতা নির্বাচন করো। যদি তুমি দলনেতা নির্বাচিত না হও মনে কষ্ট রেখো না। তুমি দলে অংশগ্রহণ করে একসঙ্গে কাজ করছো এটিই বড়ো বিষয়। তোমরা মাতা-পিতা/অভিভাবকের কাছ থেকে আদর্শ খ্রীষ্টিয় পরিবারের যে ভালো দিকগুলো জেনেছ সেগুলো দলে আলোচনা করে একটি তালিকা তৈরি করো। তালিকাটি শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। তালিকা তৈরি এবং উপস্থাপনের জন্য শিক্ষক তোমাদের প্রত্যেক দলকে যে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেন সে সময়ের মধ্যে উপস্থাপনা শেষ করতে হবে। একটি নমুনা তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
ক্রমিক নং | একটি আদর্শ খ্রীষ্টিয় পরিবারের ভালো দিকসমূহ |
১. |
|
২. |
|
৩. |
|
8. |
|
৫. |
|
শিক্ষককের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিদায় নাও।
বিবাহ ও পরিবার
প্রিয় শিক্ষার্থী, এ সেশনে তোমরা পবিত্র বাইবেল ও শিক্ষকের কাছ থেকে বিবাহ ও পরিবার সম্পর্কে জানবে। তোমরা শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে নিচের গানটি অথবা সমতুল্য একটি গান করো।
আবার গাও, মিষ্টি স্বরে গাও
১। আবার গাও, মিষ্টি স্বরে গাও
জীবনদায়ী বাক্য!
তাহা আমায় আরও শিখাও
জীবনদায়ী বাক্য!
ঈশ্বরের ঐ উক্তি
শিখায় বিশ্বাস, ভক্তি।
ধূয়া- সুন্দর বাক্য, মধুর বাক্য।
জীবনদায়ী বাক্য।
২। খ্রীষ্ট যীশু দেন মানব সবে,
জীবনদায়ী বাক্য,
ও ভাই শুন প্রেমের রবে,
জীবনদায়ী বাক্য,
দত্ত বিনা দামে,
লওয়ায় স্বর্গধামে।
৩। কিবা শুভ সংবাদ ধ্বনি
জীবনদায়ী বাক্য;
ক্ষমা শান্তি তাহে শুনি,
জীবনদায়ী বাক্য;
যীশু জীবনদাতা,
যীশু পরিত্রাতা।
খ্রীষ্ট সঙ্গীত ১৫৬
গানের Link: http://youtu.be/IN7CcKvJ2-A?feature=shared
পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে। ঈশ্বর তাঁদের আশীর্বাদ করে বললেন, "তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথিবী ভরে তোলো এবং পৃথিবীকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি জীবন্ত প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর।"
তোমাকে সহজ করে বলি
ঈশ্বর সকল মানুষের স্রষ্টা। তিনি সকল মানুষকে তাঁর সম্প্রদানযোগ্য গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যেন সকল মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সসীম গুণাবলির দিক থেকে মানুষ ঈশ্বরের সাদৃশ্য বা প্রতিমূর্তি। কিন্তু অপ্রদান বা অসীম গুণাবলির দিক থেকে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা। তিনি মানুষকে পুরুষ ও নারী করে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিবাহের পরিকল্পনা তিনিই করেছেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, একজন পুরুষ ও নারী উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে যেন পরিবার গঠন করেন।
বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ঈশ্বরের প্রথম আশীর্বাদ হলো তারা যেন সন্তান জন্ম দিয়ে বংশবৃদ্ধি করে পৃথিবী পূর্ণ করে। দ্বিতীয় আশীর্বাদ হলো, বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবী পূর্ণ করে সবকিছুর যত্ন ও তত্ত্বাবধান করে। তাই উপযুক্ত বয়সে বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে সন্তান জন্ম দেওয়া, ঈশ্বরের উদ্দেশে লালনপালন করে বড়ো করে তোলা এবং সৃষ্টি দেখাশুনা করা ঈশ্বরেরই দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব।
পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, "মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়। আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরি করব।" সদাপ্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ভূমির যে সব জীবজন্তু ও আকাশের পাখী তৈরি করেছিলেন সেগুলো সেই মানুষটির কাছে আনলেন। সদাপ্রভু দেখতে চাইলেন তিনি সেগুলোকে কি বলে ডাকেন। তিনি সেই সব জীবন্ত প্রাণীগুলোর যেটিকে যে নামে ডাকলেন সেটির সেই নামই হল। তিনি প্রত্যেকটি গৃহপালিত ও বন্য পশু এবং আকাশের পাখীর নাম দিলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সেই পুরুষ মানুষটির, অর্থাৎ সৃষ্টির প্রথমেই আদমের কোন উপযুক্ত সংগী দেখা গেল না। সেইজন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমের উপর একটা গভীর ঘুম নিয়ে আসলেন, আর তাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন তিনি তাঁর একটা পাঁজর তুলে নিয়ে সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিলেন। আদম থেকে তুলে নেওয়া সেই পাঁজরটা দিয়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর একজন স্ত্রীলোক তৈরি করে তাঁকে আদমের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁকে দেখে আদম বললেন, "এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরি। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে।"
তোমাকে সহজ করে বলি
মানুষ সামাজিক জীব। সে একা থাকতে পারে না। তার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী দরকার। পুরুষের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী কেবল স্ত্রীলোকই হতে পারে। একইভাবে একজন স্ত্রীলোকের জীবনসঙ্গী কেবল পুরুষলোকই হতে পারে। সৃষ্টির প্রথমেই ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত প্রাণী আদমের কাছে আনা হয়েছিল যেন তিনি সেগুলোর নাম রেখে তাদের মধ্য থেকে নিজের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু কোনো প্রাণীর মধ্যেই নিজের জন্য জীবন সঙ্গী খুঁজে পেলেন না। এজন্য ঈশ্বর আদমকে গভীরভাবে ঘুম পাড়িয়ে তাঁর একটি পাঁজর নিয়ে একজন স্ত্রীলোক তৈরি করলেন তাঁর জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্য। এই গভীর ঘুমকে বর্তমানে আমরা ঈশ্বরের কাছে গভীর প্রার্থনা ও নির্ভরতাকে বোঝাতে পারি। আদম আনন্দিত হয়ে খুশিতে তাঁর নাম দিলেন 'স্ত্রীলোক'। পুরুষ মানুষের দেহ থেকে তৈরি হওয়ার জন্য 'স্ত্রীলোক' নামটি দেয়া হয়েছে। মানুষের হাড়, মাংস, রক্ত, বুদ্ধিমত্তা, আবেগ-অনুভূতি ও দায়িত্ববোধে একটি সুন্দর মিল আছে। এ মিল মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায় না। পুরুষ মানুষের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী কেবল নারীই হবে, এটাই মানুষের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা। একজন পুরুষ/ স্ত্রীলোক উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে পরিবার গঠন করবে এবং সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখবে।
পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে যিহুদিয়া প্রদেশে এবং যদন নদীর অন্য পারে গেলেন। অনেক লোক আবার তাঁর কাছে এসে জড়ো হল। তখন তিনি তাঁর নিয়ম মতই লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। এই সময় কয়েকজন ফরীশী এসে যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য বললেন, "মোশির আইন-কানুন মতে স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি কারও পক্ষে উচিত?” যীশু তাঁদের বললেন, "মোশি আপনাদের কি আদেশ দিয়েছেন?" তাঁরা বললেন, "তিনি ত্যাগপত্র লিখে স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার অনুমতি দিয়েছেন" যীশু বললেন "আপনাদের মন কঠিন বলেই মোশি এই আদেশ লিখেছিলেন। কিন্তু এ-ও লেখা আছে যে, সৃষ্টির আরম্ভে 'ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন। এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে, আর তারা দু'জন একদেহ হবে।' সেইজন্য তারা আর দুই নয়, কিন্তু একদেহ। তাহলে ঈশ্বর যা একসঙ্গে যোগ করেছেন মানুষ তা আলাদা না করুক।"
তোমাকে সহজ করে বলি
মোশির সময়ে লোকদের অন্তর খুব কঠিন ছিলো। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলেন। লোকেরা ছোট ছোট কারণে মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে সহজেই স্ত্রীদেরকে পরিত্যাগ করতেন। স্ত্রী পরিত্যাগ বিষয়টি সহজ হওয়ার কারণে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিচ্ছেদের পর অনেক স্ত্রীলোকের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছিলো। ঐ প্রেক্ষাপটে স্ত্রী পরিত্যাগের হার কমানোর জন্য মোশি লিখিতভাবে পরিত্যাগের নিয়ম দিয়েছিলেন। কিন্তু সৃষ্টির শুরুতে এমন নিয়ম ছিল না। ঈশ্বর সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন যেন তারা সারা জীবন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে থাকেন। এজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করে একসঙ্গে থাকবে।
ঈশ্বর বিবাহোত্তর শান্তিপূর্ণ বৈবাহিক জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, 'ঈশ্বর যা একসঙ্গে যোগ করেছেন মানুষ যেন তা আলাদা না করে।' পবিত্র শাস্ত্রে যীশু আরও বলেছেন যে, যদি কোনো স্বামী নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য স্ত্রীকে বিয়ে করে তাহলে সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে। একইভাবে যদি কোনো স্ত্রীলোক তার স্বামীকে ত্যাগ করে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তবে সেও ব্যভিচার করে। পবিত্র বাইবেল বিবাহ বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করেছে। এজন্য বিবাহ বিচ্ছেদকে আমাদের 'না' বলা দরকার এবং বিবাহিত নারী-পুরুষকে ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্যতায় জীবনযাপন করা দরকার।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা এখন নিচের লিংকের ভিডিওটি দেখবে। তবে শিক্ষক তোমাদের সমতুল্য একটি ভিডিও দেখাতে পারেন। খ্রীষ্টিয়ান বিবাহের এই ভিডিওটিতে কী কী রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখো। এ বিষয়ে একটি ভিডিও লিংক সংযুক্ত করা হলো।
https://www.youtube.com/watch?v=FBUXE6WmVE4
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে চারটি দলে ভাগ হও। প্রত্যেকটি দলে একজন দলনেতা নির্বাচন করো। তোমরা দলগতভাবে বাইবেলের শিক্ষার আলোকে এবং ভিডিও দেখে খ্রীষ্টিয়ান বিয়ে সম্পর্কে যে সকল ধর্মীয় বিধিবিধান সম্বন্ধে জেনেছ তার একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। শিক্ষকের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি করো।
ক্রমিক নং | খ্রীষ্টিয় বিবাহের বিধিবিধান |
১. |
|
২. |
|
৩. |
|
8. |
|
৫. |
|
প্রিয় শিক্ষার্থী, এ সেশনে শিক্ষক তোমাদের একটি প্রবাহচিত্র তৈরি করতে বলবেন। প্রবাহচিত্রটি তৈরি করার জন্য তোমাদের নিকটাত্মীয়ের/নিজ এলাকার কয়েকটি পরিবার পরিদর্শনে যেতে হবে।
তোমরা প্রত্যেকে পাঁচটি পরিবার পরিদর্শনের জন্য একটি পরিকল্পনা করো। তুমি কোন পাঁচটি পরিবার পরিদর্শন করবে তা ঠিক করে নাও। পরিবার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রেখো। যাতায়াতের জন্য যানবাহনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখো। তোমার সঙ্গে তুমি তোমার মা-বাবা/ অভিভাবক নিতে পারো। তুমি চাইলে তোমার প্রতিবেশীর পরিবারও পরিদর্শনে যেতে পারো।
পরিদর্শনের জন্য পরিবারগুলোর সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করে দিন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করো, যেন তুমি যখন যাও তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারো। পরিদর্শনের উদ্দেশ্য আগে থেকে জানিয়ে রেখো যেন তারা তোমার পরিদর্শনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
প্রত্যেকের জীবনে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুমি নিজের এবং জীবন সম্পর্কে কেমন অনুভব করো তার উপর তোমার পরিবার বড়ো একটি প্রভাব ফেলতে পারে। সময়ের পরিবর্তন এবং বয়স বৃদ্ধিরসঙ্গে তুমি পরিবারের কেমন পরিবর্তন আশা করো। পরিবারের পরিবর্তন শুধু সংস্কৃতিগত না হয়ে কাঠামোগতও হতে পারে। পরিবারগুলোর মধ্যে সমস্যা বা দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি পরিবারের মধ্যে কিছু স্বাতন্ত্র্য আছে। একটি পরিবার হওয়ার কোনো একক সঠিক উপায় নেই এবং কোনো দুটি পরিবার একইরকম নয়।
পরিদর্শনের সময় লক্ষণীয় বিষয়বস্তু
তুমি যে পরিবারগুলো পরিদর্শন করবে, সে পরিবারগুলোর গঠনগত কাঠামো তোমার নোটবুকে লিখে রেখো। গঠনগত দিকগুলোর পেছনে যে সকল ধর্মীয় বিধিবিধান কাজ করেছে, সেগুলোও জিজ্ঞেস করে জেনে নিও। পরিবারগুলো পরিদর্শন শেষে গঠনগত কাঠামোর যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পেয়েছ সেগুলো নিয়ে একটি প্রবাহচিত্র তৈরি করো। প্রবাহচিত্র তৈরি হলে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। নিচে প্রবাহচিত্রের একটি নমুনা দেওয়া হলো।
উপস্থাপনা সমাপ্ত হলে শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাও।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক এ সেশনটি একটি ছোটো প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারেন। তিনি তোমাকেও প্রার্থনায় নেতৃত্ব দিতে বলতে পারেন। তুমি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, আমাদের প্রত্যেকের একটি পরিবার আছে। আমার যেমন একটি পরিবার আছে তেমনি তোমাদেরও পরিবার আছে। আমার যেমন বাবা, বাবার বাবা অর্থাৎ ঠাকুরদাদা আছে তেমনি ঠাকুরদাদারও বাবা ছিল। একইভাবে তোমাদেরও ঠাকুরদাদা বাবা - তুমি। এভাবেই বংশানুক্রমে তোমাদের উৎপত্তি হয়েছে। তোমরা বিভিন্ন শ্রেণিতে হয়তো 'ফ্যামিলি ট্রি' তৈরি করেছ। এখন আমরা একটি পরিবারের ফ্যামিলি ট্রি-তে সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের পারস্পরিক দায়িত্বসমূহ উপস্থাপন করব। এরকম একটি ফ্যামিলি ট্রির নমুনা নিচে দেওয়া হলো।
শিক্ষক একটি পোস্টার পেপারে একটি পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দায়িত্বসম্বলিত একটি ফ্যামিলি ট্রি এঁকে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন। একইভাবে তোমরা প্রত্যেকে পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দায়িত্বসম্বলিত একটি ফ্যামিলি ট্রি আঁকবে। ফ্যামিলি ট্রি-তে উল্লিখিত সকল সদস্য তোমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে অর্থাৎ তোমার পরিবারে যে ক'জন সদস্য রয়েছে সে ক'জনের কথাই উল্লেখ করবে।
বাড়ির কাজ
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাড়িতে গিয়ে তোমার তৈরি ফ্যামিলি ট্রি নিয়ে মা-বাবা/অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করবে।
আলোচনার পরে আরও কিছু সংযুক্ত করতে চাইলে তা করতে পারবে।
শিক্ষককে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে পবিত্র বাইবেল থেকে নিচের অংশটুকু পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। তুমি এ অংশটুকু পড়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো। কারণ শিক্ষক তোমাকেও এ অংশ থেকে পাঠ করতে বলতে পারেন।
হিতোপদেশ ৬:৬-১১ পদ
"হে অলস, তুমি পিঁপড়ার কাছে যাও, তাঁর চলাফেরা দেখে জ্ঞান লাভ কর। তাকে আদেশ দেবার কেউ নেই, তাঁর উপরে কোন পরিচালক বা শাসনকর্তা নেই;
তবুও সে গরমকালে তার খাবার জমা করে রাখে।
আর ফসল কাটবার সময় খাবার যোগাড় করে।
হে অলস, আর কতকাল তুমি শুয়ে থাকবে? কখন ঘুম থেকে উঠবে?
তুমি বলে থাক, "আর একটু ঘুম, আর একটু ঘুমের ভাব,
বিশ্রামের জন্য আর একটুক্ষণ হাত গুটিয়ে রাখি।"
কিন্তু বারে বারে দস্যু আসলে কিম্বা অস্ত্রশস্ত্রে সাজা
ব্যাক্তির হাতে পড়লে যেমন অভাব আসে, ঠিক তেমনি করে তোমারও অভাব আসবে।"
জোড়ায় কাজ
তোমরা নিশ্চয়ই ফ্যামিলি ট্রি-এর কাজটি সম্পন্ন করেছ। পরিবারের সদস্যদের প্রতি তোমার দায়িত্ব এবং তোমার প্রতি পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব কী কী তা লিখেছ। শিক্ষক জোড়ায় তোমাদের একটি মজার কাজ করতে দিবেন। তোমরা জোড়ায় একে অন্যের সাক্ষাৎকার নিবে। শ্রেণিকক্ষে সকলের সামনে তোমরা সাক্ষাৎকার নিবে। সাক্ষাৎকারে যে বিষয়গুলো থাকবে তা হলো-
- মা, বাবা/অভিভাবকের প্রতি তোমার দায়িত্ব;
- তোমার প্রতি মা, বাবা/অভিভাবকের দায়িত্ব:
- ঠাকুরমা, ঠাকুরদাদা, নানি (দিদিমা), নানা (দাদু)-র প্রতি তোমার দায়িত্ব।
সংলাপ লিখতে হবে (যেমন-মা-বাবা/অভিভাবকের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা, ঠাকুরমা/ঠাকুরদাদার কাপড় ধুয়ে দেওয়া... ইত্যাদি)।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো এককভাবে চিন্তা করে তোমাকে খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে যাতে সাক্ষাৎকারের সময় তোমরা দ্রুত উত্তর দিতে পারো। এ কাজটির জন্য কিছুসময় বরাদ্দ থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি করবে।
তোমাদের কাজ সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে প্রতি জোড়াকে সাক্ষাৎকারে প্রাপ্ত তথ্য জানানোর জন্য আহ্বান করা হবে। উপস্থাপনের সময় নতুন তথ্যের উপর বেশি গুরুত্ব দিবে। সব ক'টি জোড়ার উপস্থাপন সম্পন্ন হলে শিক্ষক তোমাদের উৎসাহিত করবেন এবং প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পারিবারিক দায়িত্বের উপসংহার টানবেন।
শিক্ষককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিচের গানটি অথবা খ্রীষ্টসংগীত, ধর্মগীত থেকে সমতুল্য একটি গান দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবেন। তুমি গানটি Youtube অথবা তোমার মা-বাব্য/অভিভাবকের কাছ থেকে শিখে নিতে পারো।
প্রণাম করি মিষ্ট যীশু, আসি তোমার দুয়ারে
আমার হৃদয়, বাক্য চিন্তা, কার্য সঁপি তোমারে।।
১. তোমার প্রেমের চিন্তা আমি মনে রাখব সতত
অপর কোন চিন্তার মাঝে যেন না হই বিব্রত।।
২. আমি তুলব চক্ষু তোমায় দেখতে উর্ধ্বে আগারে
আমার হৃদে প্রতি স্পন্দন প্রীতি দিবে তোমারে।।
৩. আমি শুনব নিত্য নিত্য তোমার বাক্য সমুদয়
পালন করব তোমার ইচ্ছা প্রীতিযুক্ত বাধ্যতায়।।
৪. অবশেষে আসবে সন্ধ্যা দিনমান শেষ হয়ে
প্রণাম করব এসে তখন সেবার আনন্দ লয়ে।।
৫. আশীর্বাদ দেও, যীশু মোরে তবে আমি কাজে যাই
তোমার সঙ্গে রয়ে আবার তোমার সাক্ষাৎ পাই।।
গীতাবলী ৫০৩
পরিবারের সদস্যদের প্রতি তোমার দায়িত্ব এবং তোমার প্রতি পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব কী তা বিভিন্নভাবে জেনেছ। এ সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলে কী লেখা আছে তা দেখি।
পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ
শিক্ষক তোমাদের মধ্য থেকে ২/৩ জন শিক্ষার্থীকে ইফিষীয় ৫:২২, ২৩, ২৫, ৩১-৩৩ পাঠ করতে বলবেন। তুমি আগে থেকে পড়ে প্রস্তুত থেকো। তুমিও পড়ার সুযোগ পেতে পারো। ভক্তি সহকারে শুদ্ধ উচ্চারণে বাইবেলের অংশটুকু পাঠ করবে। কোথাও ভুল হলে তিনি সংশোধন করে দিবেন।
তোমরা যারা স্ত্রী, প্রভুর প্রতি বাধ্যতার চিহ্ন হিসাবে তোমরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, কারণ খ্রীষ্ট যেমন মণ্ডলীর, অর্থাৎ তাঁর দেহের মাথা, স্বামীও তেমনি স্ত্রীর মাথা। তাছাড়া খ্রীষ্টই এই দেহের উদ্ধারকর্তা। তোমরা যারা স্বামী, খ্রীষ্ট যেমন মন্ডলীকে ভালবেসেছিলেন এবং তাঁর জন্য নিজেকে দান করেছিলেন ঠিক তেমনি তোমরাও প্রত্যেকে স্ত্রীকে ভালবেসো।
পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, "এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু'জন একদেহ হবে।" এটা একটা মহান গুপ্ত সত্য- কিন্তু আসলে আমি খ্রীষ্ট এবং তাঁর মণ্ডলীর কথা বলছি। কিন্তু যাক সেই সব কথা। তোমরা প্রত্যেকে নিজের স্ত্রীকে নিজের মত ভালবেসো, আর স্ত্রীরও উচিত যেন সে নিজের স্বামীকে সম্মান করে।
সহজ করে বলছি
এই পদগুলোতে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে মন্ডলীর তুলনা করা হয়েছে। স্ত্রী যেমন স্বামীর প্রতি বাধ্য ও নম্র, যীশু ও মন্ডলীর প্রতি আমাদের তেমনি নম্র থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যীশুখ্রীষ্ট যেমন মন্ডলীর জন্য জীবন উৎসর্গ করে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, স্বামীর উচিত স্ত্রীকে তেমনি ভালোবাসা এবং নিজের জীবন স্ত্রীর জন্য দান করা।
পবিত্র বাইবেলে স্বামী-স্ত্রীকে একত্রে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নতুন পরিবার গঠন করার জন্য তারা একত্রে থাকবেন। নতুন পরিবার গঠন করার জন্য মা-বাবা তাদের সাহায্য করবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন সত্য। সাধু পৌল স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্কের সঙ্গে যীশু ও মণ্ডলীর তুলনা করেছেন। যীশু যেমন মন্ডলীকে ভালোবেসেছেন, স্বামীরও উচিত স্ত্রীকে তেমনি ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রী অবশ্যই একে অপরকে সম্মান করবে।
ইফিষীয় ৬:১-৩; হিতোপদেশ ১:৮-৯, ২২:৬,১৫: ২৩:২২-২৫; ২৯:১৭ এবং লেবীয় ১৯:৩২ পদে মা, বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখি-
ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত। পবিত্র শাস্ত্রে প্রথম যে আদেশের সংগে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা এই "তোমার মা-বাবাকে সম্মান কর, যেন তোমার মঙ্গল হয় এবং তুমি অনেক দিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পার।"
ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না। সেগুলো হবে তোমার মাথায় জড়াবার সুন্দর মালা আর গলার হারের মত।
ছেলে বা মেয়ের প্রয়োজন অনুসারে তাকে শিক্ষা দাও, সে বুড়ো হয়ে গেলেও তা থেকে সরে যাবে না। ছেলে বা মেয়ের অন্তরে বোকামি যেন বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসনের লাঠি তা তার কাছে থেকে দূর করে দেয়।
তোমার বাবার কথা শোন যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন; তোমার মা বুড়ী হয়ে গেলে তাকে তুচ্ছ কোরো না। যে কোন মূল্যেই হোক না কেন সত্য, জ্ঞান, শিক্ষা এবং বিচারবুদ্ধি লাভ কর; কোন কিছুর বদলে তা অন্যকে দিয়ো না। ঈশ্বরভক্ত লোকের বাবা মহা আনন্দ লাভ করেন; জ্ঞানী ছেলের বাবা তাঁর ছেলের দ্বারা সুখী হন। তোমার মা-বাবা যেন সুখী হন; যিনি তোমাকে প্রসব করেছেন তিনি যেন আনন্দিতা হন।
তোমার ছেলেকে শাসন কর, তাতে সে তোমাকে শান্তিতে রাখবে আর তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে।
"যারা বৃদ্ধ তারা কাছে আসলে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সম্মান করতে হবে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। আমি সদাপ্রভু।"
সহজ করে বলছি
পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বরের প্রত্যাশা অনুসারে সন্তানদের মা-বাবার বাধ্য হয়ে চলতে বলা হয়েছে। এখানে মা- বাবাকে সম্মান করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মা-বাবাকে সম্মান করলে সন্তানেরা আশীর্বাদ পাবে এবং তারা দীর্ঘজীবী হবে। তাদের উপদেশ ও শিক্ষা সন্তানের মাথার মুকুট ও গলায় হারের মতো। মাথার মুকুট ও গলায় হার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি মা-বাবার উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করলে সন্তানদের সুন্দর দিকগুলোও মানুষ দেখতে পায়।
সন্তানদের যেভাবে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন সেভাবে শিক্ষা দিলে তারা বৃদ্ধ হলেও ভুলে যাবে না। তারা না বুঝে অনেক ভুল করে কিন্তু মা-বাবার ভালোবাসাপূর্ণ শাসনের ফলে তা শুধরে নেয়। সন্তানদের মা-বাবার কথা শোনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা, বুদ্ধি ও জ্ঞান লাভ করতে হবে। মা-বাবার পাশাপাশি সকল বৃদ্ধ ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। ঈশ্বরভক্ত ও জ্ঞানী সন্তানদের দেখে মা-বাবা খুশি হন।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা পূর্ববর্তী সেশনে তোমাদের পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের দায়িত্বের ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করেছ, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেও পারস্পরিক দায়িত্ব সম্বন্ধে জেনেছ। এখন পবিত্র বাইবেলের শিক্ষার আলোকে পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব সম্বন্ধে যে দিক-নির্দেশনা রয়েছে তা কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে বিশ্লেষণ করে প্রত্যেকে লিপিবদ্ধ করো।
শিক্ষার্থীদের কাজ সম্পন্ন হলে কয়েকজনকে প্রশ্ন করে তাদের উত্তরগুলো জেনে নিন। অন্য শিক্ষার্থীরা কোনো নতুন তথ্য পেলে তা নোট করবে।
পরবর্তী সেশনে শিক্ষক তোমাদের বাইবেলের শিক্ষার আলোকে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে দিবেন। বিতর্কের বিষয়- 'পরিবারের সকল সদস্যের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।'
শিক্ষক তোমাদের দুটি দলে ভাগ করে দিবেন। একটি পক্ষ দল, অন্যটি বিপক্ষ দল। তোমাদের নির্ধারিত বিষয়টি দলে আলোচনা করে যুক্তি/পয়েন্ট ঠিক করতে হবে। শিক্ষক একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তোমাদের মধ্য থেকে তিনজন বক্তা নির্বাচন করবেন। তিনজনের মধ্যে একজন হবে দলনেতা। বিতর্কের জন্য তোমরা বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আসবে।
শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাও।
সেশনের শুরুতে শিক্ষকের সঙ্গে ছোটো একটি প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো।
বাইবেলের শিক্ষার আলোকে তোমাদের আজ একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে হবে। বিতর্কের বিষয়- 'পরিবারের সকল সদস্যের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ' যা পূর্ববর্তী সেশনে জেনেছ।
শিক্ষক ইতোমধ্যে তোমাদের দুটি দলে ভাগ করে দিয়েছেন। একটি পক্ষ দল, অন্যটি বিপক্ষ দল। তোমাদের নির্ধারিত বিষয়টি দলে আলোচনা করার জন্য নির্দিষ্ট সময় দিবেন। ঐ সময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিতর্ক অনুষ্ঠান পরিচালনার প্রস্তুতি নিবে। তোমাদের মধ্য থেকে একজন সময় রক্ষক ঠিক করে দিবেন। একজন শিক্ষার্থীকে সঞ্চালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে শিক্ষক বিতর্কের নিয়মাবলি জানিয়ে দিবেন। সাধারণ বক্তা সময় পাবে তিন মিনিট। দলনেতার জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে পাঁচ মিনিট। প্রথমে দেওয়া হবে তিন মিনিট এবং যুক্তি খণ্ডানোর জন্য দুই মিনিট। এরপর বিতর্কের কার্যক্রম শুরু করবেন।
বিতর্ক অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক বিজয়ী দল ও শ্রেষ্ঠ বক্তার নাম ঘোষণা করবেন।
তোমাদের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা যদি কম হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টির উপর শিক্ষক ভিন্ন কাজ করাতে পারেন।
শিক্ষককে আনন্দদায়ক কাজটির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবেন।
জোড়ায় কাজ
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক তোমাদের জোড়ায় ভাগ করে দিবেন। তোমার মা-বাবা/গুরুজনের প্রতি তোমার দায়িত্ব কী তা জেনেছ। তুমি তোমার পরিবারের যে কোনো দুজন সদস্যের প্রতি কোন কোন দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে চাও তা জোড়ায় আলোচনা করে পরিকল্পনা তৈরি করবে। পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য যে সময় বরাদ্দ থাকবে সে সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করবে। প্রয়োজনে শিক্ষক তোমাকে সহায়তা করবেন।
বাড়ির কাজ
পরবর্তী সেশনের আগেই তোমরা প্রত্যেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়িতে এ কাজটি সম্পন্ন করবে এবং খাতায় লিপিবদ্ধ করবে। প্রয়োজনে মা-বাবা/অভিভাবকের সহায়তা নিতে পারবে।
তথ্য ছক পূরণ করি
পরবর্তী সেশনে শিক্ষক কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তোমাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। তোমার মা-বাবা/ গুরুজনের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছ তার মধ্য থেকে দুটি দায়িত্বের বিবরণী নিচের তথ্য ছকে পূরণ করতে হবে। পূরণকৃত তথ্য ছকে তোমার মা-বাবা/অভিভাবকের স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিবে।
তথ্য ছকের নমুনা-
শিক্ষার্থীর নাম:
পরিবারের যে সদস্যের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছ তার পরিচয়:
যে যে দায়িত্ব পালন করেছ তার তালিকা:
যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছ: তোমার অনুভূতি:
এরূপ অনুভূতির কারণ:
এ দায়িত্ব পালনে যিনি তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন তার নাম:
পরবর্তী সময়ে আর যে সকল দায়িত্ব পালনে তুমি ইচ্ছুক:
মা/বাবা/অভিভাবকের স্বাক্ষর:
মহান কাজটির জন্য শিক্ষক তোমাদের প্রশংসা করবেন।
প্রিয় শিক্ষার্থী, প্রতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দ্বিতীয় সেশনের আগেই পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করে তোমার বইয়ের নির্ধারিত পৃষ্ঠার কার্যসম্পাদন ছকে লিখবে যেখানে তোমার মা- বাবা/অভিভাবকের মতামত ও স্বাক্ষর থাকবে এবং শিক্ষকেরও স্বাক্ষর থাকবে। তোমার মা-বাবা/অভিভাবক ছকটি বুঝতে না পারলে তোমার বইয়ের এ অংশে নিচের ঘরের লেখাটি তাদের দেখাও।
শিক্ষককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
কার্যসম্পাদন ছক-
আরও দেখুন...